কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ।।কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের কান্ড দেখে সকলেই হতবাক হয়েছে। ওই থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান তালুকদারকে নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা ও সমালোচনা। কুষ্টিয়ার বটতৈলে ঘটে যাওয়া প্রতিপক্ষের হামলায় আহত অসুস্থ আতিয়ার কে থানায় আটকে রেখে মামলার বাদী আতিয়ারের স্ত্রী নীলা খাতুনের দায়ের করা মূল এজাহার ফেলে দিয়ে মনগড়া একটি এজাহার থানার কম্পিউটারে তৈরি করে নীলার স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে হামলাকারীরা থানায় কোনো অভিযোগ না করলেও ঘটনার চারদিন পর গত ২২ তারিখ সকালে আসামি রুবেলকে বাদী করে একটি মিথ্যা ও বানোয়াট কাহিনী তৈরি করে মামলা নিয়েছেন ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার। এ মামলা পরিবর্তনের কারণে বিচার পাওয়াতো দূরের কথা, হামলার শিকার আহত আতিয়ার অসুস্থ অবস্থায় এখন জেলহাজতে রয়েছেন। সুষ্ঠু বিচারের আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে অসহায় মামলার বাদী নীলা। কি হবে তাদের জানা নেই। তার স্বামী একজন রাজমিস্ত্রি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সে। মামলা চালানোর টাকাই বা পাবে কোথায়?
উল্লেখ্য,কুষ্টিয়া শহরতলির বটতৈল ভাটাপাড়ায় এক মাদকসেবী লম্পটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় গৃহবধুসহ ৫ জন মারাত্মক আহত হয়। আহতদের মধ্যে মোঃ আতিয়ার রহমান ও তার ছেলে জীবনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার এক পর্যায়ে আতিয়ারের অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। এলাকাবাসী ও আহতরা জানায়, ওই এলাকার আব্দুস সাত্তার শেখের ছেলে মাদকসেবী লম্পট জুয়েল রানা দীর্ঘদিন থেকে ওই এলাকার মৃত আবদুল আজিজের ছেলে আতিয়ারের স্ত্রীকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এছাড়াও সে বিভিন্ন সময় আতিয়ার এর বাড়িতে প্রবেশ করে মাতাল অবস্থায় ঘরের দরজায় নক করে জানালা দরজায় উকি দিয়ে অসামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। এ ঘটনাটি নিয়ে আতিয়ার ও তার পরিবার ইতিপূর্বে স্থানীয় মেম্বার জামাল ও লম্পট জুয়েলের পরিবারকে অবহিত করেন। ওই সময় জুয়েলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেয়ে গত এক মাস আগে জুয়েলকে ওই বাড়িতে হাতেনাতে ধরে জুয়েলের পরিবার মারধর করে জুয়েলকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। ওই সময় তারা আতিয়ার ও তার পরিবারকে বলে যায়, পরবর্তীতে এমন কর্ম করলে জুয়েলকে বেঁধে রেখে সংবাদ দিতে বলে। এরই এক পর্যায়ে গত ১৭ অক্টোবর রাত ১২ টার দিকে জুয়েল আবারোও মদ্যপান অবস্থায় ওই বাড়িতে প্রবেশ করে মাতলামি শুরু করে। এ সময় আতিয়ার ও তার বাড়ির লোকজন জুয়েলকে আটক করে বেঁধে রেখে স্থানীয় মেম্বার জামাল ও লম্পট জুয়েলের পরিবারকেও সংবাদ দেয়। এ সংবাদ পেয়ে জুয়েলের পিতা আব্দুস সাত্তার শেখ ও তার ছেলে রুবেল (৩৬), আফতাবের ছেলে শামীম( ৪০), চাঁদ মিয়ার ছেলে ইলিয়াস( ১৮), শামীমের স্ত্রী শামীমা, রুবেলের স্ত্রী নুপুর ও লম্পট জুয়েয়ের স্ত্রী চম্পা দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছুটে আসে এবং লম্পট জুয়েলকে বেঁধে রাখার দৃশ্যটি ভিডিও ধারন করার পর আতিয়ারের পরিবারের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ হামলায় আতিয়ার (৪০) ও তার ছেলে জীবন (১৬), লতিফ (৩৫) তার স্ত্রী বাসরা(৩০)ও প্রতিবেশী নাজমা হামলা ঠেকাতে সে মারাত্মক আহত হয়। আহতদের ওই রাতেই কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে মারাত্মক আহত অবস্থায় আতিয়ার ও তার ছেলে জীবনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অন্যান্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই রাতেই প্রতিপক্ষের সাত্তার শেখ ও তার ছেলে জুয়েল রানা হাসপাতলে নাটকীয় ভাবে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। গত ১৮ অক্টোবর আহত আতিয়ারের স্ত্রী নীলা খাতুন বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ৬ জনকে আসামী করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও অদৃশ্য কারণে মামলাটি গ্রহণ করা হচ্ছিল না। অপরদিকে হামলাকারীরা নানাভাবে আতিয়ারের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছিলেন প্রাণনাশ ও গ্রাম ছাড়া করার।
এরই এক পর্যায়ে ঘটনাটি নিয়ে আবারো কুষ্টিয়ার অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায়়় ফলোআপ করে সংবাদ প্রকাশ হয়। এ সংবাদ প্রকাশের পর কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান তালুকদার আহত আতিয়ার ও তার পরিবারকে থানায় ডেকে পাঠায় এজাহার সংশোধন করার জন্য। এ সংবাদ পেয়ে আহত আতিয়ার ও তার স্ত্রী গত ২১ অক্টোবর বিকেলে কুষ্টিয়া মডেল থানায় এজাহার সংশোধন করে জমা দিতে গেলে অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান এর নির্দেশে আতিয়ারকে থানার লকাবে আটকে রাখা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় হামলাকারীদের মধ্যে জুয়েল রানা, রুবেল ও তাদের পিতা সাত্তার শেখ কে কৌশলে থানায় ডেকে আনা হয়। ওই রাতেই থানার কম্পিউটারে অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান তালুকদারের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার তদন্তকারী অফিসার মেহেদী হাসান নতুন করে একটি এজাহার তৈরি করেন এবং আতিয়ারকে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বাদী নীলার স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এ ঘটনা গুলোর বিভিন্ন চিত্র থানার সিসি ক্যামেরা দেখলেই বের হয়ে আসবে। নীলার দায়ের করা মূল এজাহারের গুরুত্বপূর্ণ্ণ্ণ বিষয়গুলো বাদ দিয়ে নতুন এজাহারটি তৈরি করা হয়। অপরদিকে প্রতিপক্ষ আসামি জুয়েল রানা ও রুবেলকেও ওসির নির্দেশে লকাবে আটকে রাখা হয়। রাত এগারোটার পর উভয় পক্ষের লোকজনকে পরের দিন ২২ অক্টোবর সকাল দশটার সময় থানায় হাজির হতে বলেন ওসি কামরুজ্জামান। এদিকে গভীর রাতে আটককৃতদের মধ্যে রুবেলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওসির নির্দেশ অনুযায়ী পরের দিন সকালে উভয় পক্ষের লোকজন থানায় উপস্থিত হলে তিনি জানান, উভয়পক্ষের মামলা হয়েছে কাউকে ছাড়া যাবে না। এ কথা বলার কিছুক্ষণ পর মামলার তদন্তকারী অফিসার মেহেদী হাসান একটি মিথ্যা ও বানোয়াট এজাহার এনে থানার চত্বরে বকুলতলায়় আসামি রুবেলের স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে যান। ওই এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে আসামি জুয়েল রানা ও রুবেলের পিতা সাত্তার শেখ কে সাবল দিয়ে মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। অথচ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের রেজিস্টারে তার শরীরে রক্তপাতের কোন কথা উল্লেখ নেই। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যান। এ দুটি মামলা এন্ট্রি হওয়ার পর আসামিপক্ষদের হাসতে ও ভুক্তভোগীদের কাঁদতে দেখা গেছে। এ ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জামাল মেম্বারের সঙ্গে কথা বললে তিনি ওই সময় বলেন, লম্পট জুুয়েল রানার শাস্তি আমরা চাই। এর বিরুদ্ধে আরোও অনেক অভিযোগ রয়েছে। এলাকার আরও ৫/৬ টি মেয়ের সাথে অশ্লীল কর্মকাণ্ড করার ঘটনাও ইতিপূর্বে ঘটিয়েছ সে। এরা একটু প্রভাবশালী এবং টাকা-পয়সার গরমে এরা মানুষকে মানুষ মনে করে না’ অসহায় মেয়েদের নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াচ্ছে ।