মোঃফয়সাল চৌধুরী: ২২ বছর আগে ১৯৯৮ খৃষ্টাব্দে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৫১ তম জন্মদিনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম তাঁকে একটি শিশুর ‘বক্তৃতা’ উপহার দিয়েছিলেন। শহীদ শেখ রাসেলকে নিয়ে শিশুটির বক্তৃতা শুনে প্রধানমন্ত্রী আপ্লুত হয়েছিলেন, তাকে অভিনন্দন জানিয়ে ডেকে পাঠিয়েছিলেন গণভবনে। প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সেই ‘শিশুবক্তা’ ছুটে এসেছিল সুদূর লক্ষ্ণীপুর জেলা থেকে। নেতা-কর্মী ও দেশবরেণ্যদের উপস্থিতে প্রধানমন্ত্রী সেদিন পাশে বসিয়ে শিশুটির বক্তৃতা শুনেছিলেন। শিশু রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে আগুন ঝরেছিল ছোট্ট শিশুর বজ্রকন্ঠে! বক্তৃতা শেষে প্রধানমন্ত্রীর নিকট বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে ‘শেখ রাসেল সড়ক’ নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছিল শিশুটি।
শিশুটির নাম মার্সেল। পুরো নাম শাহরিয়ার আলম মার্সেল। শৈশব-কৈশরে দেশ-বিদেশে আবৃতি, বক্তৃতা ও সঙ্গীত পরিবেশন করে আলোচিত হন লক্ষ্ণীপর জেলার শিক্ষক দম্পতি প্রফেসর জাহাঙ্গীর আলম ও শামসুন্নাহার বেগমের একমাত্র পুত্র মার্সেল। বরাবরই নতুন কুঁড়ি, বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সভা-সেমিনার-অনুষ্ঠানে আবৃতি, বক্তৃতা ও সঙ্গীত পরিবেশন করে পুরষ্কার জিতেছে, প্রশংসা কুঁড়িয়েছে মার্সেল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে সঙ্গীত ও সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন মার্সেল। মুম্বাই মিউজিক স্কুল থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনকারী এই শিল্পী এগিয়ে চলেছেন আবৃতি, সঙ্গীত ও সুর নিয়ে। দেশ-বিদেশের অগণিত ভক্ত-শ্রোতাকে ভাসিয়ে চলেছেন সুরের মূর্ছনায়।
আজ ১৮ অক্টেবর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি-বিজড়িত ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ রাসেল জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট মানবতার ঘৃণ্য শত্রু-খুনি ঘাতক চক্রের নির্মম বুলেটের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শিশু রাসেল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নরপিশাচরা নিষ্ঠুরভাবে তাকেও হত্যা করেছিল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে ইলেক্ট্রনিক, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের জন্য একটি প্রামাণ্যচিত্র এবং একটি ই-পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র। এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন শাহরিয়ার আলম মার্সেল। ‘ফুলের বয়স আর বাড়েনি’ শিরোনামে তাহসান আহমেদ রাসেলের পরিচালনায় প্রামাণ্যচিত্রটিতে মার্সেলের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টে ঘাতকের বুলেটের মুখে দাঁড়ানো ভয়ার্ত শেখ রাসেলের করুন ‘আর্তনাদ’ ও তীব্র প্রতিবাদ।
শহীদ শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন উপলক্ষে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে শাহরিয়ার আলম মার্সেল ‘দৈনিক গড়াই সভ্যতা’ কে বলেন, শৈশব থেকেই ‘শেখ রাসেল’ আমার কাছে একটা ‘আলাদা অনুভূতি’। শেখ রাসেল নামটি আমার নিকট অনেক ভাললাগার-ভালবাসার। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট অন্যদের সাথে নিষ্পাপ শিশু শহীদ শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়- যেটা খুবই দুঃজনক। শেখ রাসেলকে নিয়ে আমি বহুবার গান-আবৃতি-বক্তৃতা করেছি। এবার শহীদ শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রামাণ্যচিত্রটি নিয়ে কাজ করতে পেরে ভাল লেগেছে। প্রামাণ্যচিত্রটিতে নিষ্পাপ শিশু শহীদ শেখ রাসেলকে হত্যায় ঘাতকের চরম ‘নির্মমতা’ ও ‘নিষ্ঠুরতা’ কে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করা হয়েছে।
মার্সেল বলেন, ছোটবেলায় বাবার মুখে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যার কথা শুনতাম। শিশু ছিলাম বিধায় শিশু শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যার বিষয়টি আমার ছোট্ট মনে দাগ কেটে যায় এবং ‘নিষ্পাপ শিশু রাসেল’ আমার ভিতরে একটা স্থান করে নেয়। ফলে ভিতর থেকে শেখ রাসেলের প্রতি একটা টান অনুভব করি।
এ কৃতী শিল্পী বলেন, বাবার কাছ থেকেই মূলত বঙ্গবন্ধু, মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশ স্বাধীন, পনেরই আগস্ট, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর শিশুপুত্র শেখ রাসেলের নির্মম হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে শুনতাম। নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যার বিষয় নিয়ে বক্তৃতা শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নিকট বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে ‘শহীদ শেখ রাসেল সড়ক’ নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছিলাম।